সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
এরশাদহীন জাপার ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

এরশাদহীন জাপার ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ

স্বদেশ ডেস্ক:

একসময় রংপুর মানেই ছিল জাতীয় পার্টির (জাপা) একাধিপত্য। তবে সেদিন গত হয়েছে অনেক আগেই। সব শেষ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে মোটেও ভালো করতে পারেনি দলটি। এ অবস্থায় দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাপা রংপুরে কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা নিয়ে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে।

ইতোমধ্যে এরশাদের রংপুর-৩ (সদর) আসনটি শূন্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। শিগগির এখানে উপনির্বাচনের তারিখ জানানো হবে। এ আসনে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের অন্তত ১৬ জন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী আওয়ামী লীগের ৯ জন এবং ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৭ প্রার্থী।

তারা এবার এই আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে জাপা জয় পায় দুটিতে। সব শেষ উপজেলা নির্বাচনেও দলটি চেয়ারম্যান পেয়েছেন মাত্র একজন। এরশাদ ১৯৯১ সালে রংপুর-৩ আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

সে সময় গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ ছিলেন জেলে। তখন থেকে সদর আসনটি তার দখলে। ১৯৯৬ সালে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ২১টিতেই জয় পায় জাতীয় পার্টি। তবে এর পর থেকে দলটির আসনসংখ্যা শুধু কমেছে। শুধু সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনই নয়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভরাডুবি হয় দলটির। রংপুরের ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জিতেছেন।

এরশাদের মৃত্যুর পর রংপুরে জাপা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা-এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনা রয়েছে। বিগত উপজেলা নির্বাচনে রংপুরের গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নিজেদের কোনো প্রার্থীই দিতে পারেনি জাপা। গুরুত্বপূর্ণ সদর আসনে প্রার্থী দিলেও সরকারদলীয় প্রার্থীর সঙ্গে তিনি সুবিধা করতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে বড় ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। শুধু পীরগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাপার প্রার্থী বিজয়ী হন। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ৯ জন।

তারা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ, জেলা প্রচার সম্পাদক ও জেলা মহিলাবিষয়ক সম্পাদক লতিফা শওকত, মহিলা লীগের সাবেক সম্পাদক রোজি রহমান, রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুব মহিলা লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসিমা জামান ববি, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন ও জেলা দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান টুটুল।

এরশাদের শূন্য হওয়া এই আসনে তাদের অনেকেই এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত সংসদ নির্বাচনে এরশাদ ছাড়াও পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রিটা রহমান (ঐক্যফ্রন্ট-ধানের শীষ), আমিরুজ্জামান পিয়াল (ইসলামী আন্দোলন), সাব্বির আহম্মেদ (পিডিপি), আনোয়ার হোসেন বাবলু (বাসদ), আলমগীর হোসেন আলম (জাকের পার্টি), তৌহিদুর রহমান মণ্ডল (খেলাফত মজলিস) ও ছামসুল হক (এনপিপি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা এবারও এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, আমি তিনবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু জোটগত কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আশা করি এবার এই আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী দেওয়া হবে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এখানে নৌকা প্রতীকের বিকল্প নেই। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সদর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে আছে। এবার নৌকার প্রার্থী দেওয়া হবে। আশা করি নৌকাই এখানে বিজয়ী হবে।

তবে জাতীয় পার্টির আসাদুুজ্জামান ও মমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, রংপুর সদর আসন এরশাদের মূল ঘাঁটি হওয়ায় এখানে কোনো দলই সুবিধা করতে পারবে না। দলীয়ভাবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, দলের সবাই তার পক্ষেই কাজ করবেন। এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে-এমনটাই মনে করেন তারা। সদর আসনটি রংপুর মহানগর ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ১৪৯ জন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877